সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩০ অপরাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ :
৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে কলাপাড়া যুবদলের র‍্যালী ও যুব সমাবেশ চরমোন্তাজের মোজাম্মেল মেম্বারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা: গলাচিপায় সংবাদ সম্মেলন আনন্দঘন পরিবেশে আলিপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় কৃষক বাজার গণসংযোগে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল গাফফার তালুকদারের রূহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া রিটানিং কর্মকর্তারা চাইলে দায়িত্বরত আসন ও প্রিজাইডিং অফিসার ভোটগ্রহণ স্থগিত করতে পারবে………..নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বরিশালে বিএনপি নেতার চাঁদা দাবি ও হুমকি মহিপুরে স্ত্রী’র স্বীকৃতির দাবিতে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারীর অনশন সরকারি সুবিধা প্রদানের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ইউপির সদস্যের বিরুদ্ধে মানববন্ধন একসঙ্গে পাঁচ সন্তানের জন্ম দিয়ে একদিকে যেমন আনন্দ অন্যদিকে ঘোর অন্ধকার কুয়াকাটায় উৎসবমুখর পরিবেশে যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত কলাপাড়ায় ৯ হাজার ৪৭০ জন কৃষককে বীজ ও রাসায়নিক সার বিতরণ অসহায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের পাশে  ‘লাভ ফর ফ্রেন্ডস’ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সদর উপজেলা যুবদলের ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প বঙ্গোগসাগরে ঘূর্নিঝড় মোন্থা,পায়রা বন্দরে ০২ নম্বর হুশিয়ারী সংকেত
সাড়ে চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় ১২ গ্রামের ফসলহানির শঙ্কা

সাড়ে চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় ১২ গ্রামের ফসলহানির শঙ্কা

Sharing is caring!

কলাপাড়া (পটুয়াখালী)প্রতিনিধি :

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের ভাঙন ক্রমশ বাড়ছে। বিরামহীন বৃষ্টি, অস্বাভাবিক জোয়ারে সৃষ্ট জলোচ্ছাসে  উপজেলার অন্তত পাঁচটি স্পটের সাড়ে চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত।

ইতোমধ্যে রিভার সাইটসহ মূল বাঁধের ৮০ শতাংশ বিলীন হয়ে গেছে। ফলে ওইসব এলাকার মানুষ তাদের সম্পদ দূর্যোগে ঝুঁকিতে রয়েছে। যে কোন সময় জলোচ্ছাসে গোটা এলাকায় প্লাবনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে ১২ গ্রামের কৃষক আমন ফসলহানির শঙ্কায় রয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড এসব বেড়িবাঁধের ভাঙন ঠেকাতে জরুরি মেরামতের কাজ করলেও তা ভাঙনের তোড়ে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, নীলগঞ্জের গৈয়াতলা, বালিয়াতলীর চরবালিয়াতলী, চম্পাপুরের করমজাতলা ও দেবপুরে ভাঙনের যেন তান্ডব চলছে।

এ ছাড়া নিজামপুরে অন্তত পাঁচ শত মিটার বেড়িবাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। কয়েক দফা জলোচ্ছাসের ঝাপটায় রাবনাবাদ পাড়ের করমজাতলার প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধের রিভার সাইটসহ মূল বাঁধ ৮০ শতাংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

বাঁধের পাড়ের মানুষ চরম বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। বাঁধ ঘেঁষা ২৭টি পরিবার এখন ভেসে যাওয়ার শঙ্কায় রাত কাটাচ্ছেন। ধানখালী ইউনিয়নের পশ্চিম লোন্দা গ্রামে প্রায় ৪০ বছর ধরে টিয়াখালী নদী তীর সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করে আসছে ২৫০টি পরিবার। এ নদীর তীরে বেড়িবাঁধ না থাকায় বহু বছর ধরে প্রতি নিয়ত দু’দফা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় ওই এলাকায়। তলিয়ে যায় ২০০ একর কৃষি জমি, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বসত ভিটা। বর্ষাকালীন সময়ে অনেকের চুলোয় জলে না উনুন।

নষ্ট হয়ে যায় জমির ফসল। তখন চলাচলের একমাত্র বাহন হয় ভেলা কিংবা নৌকা। ওই গ্রামের ৩ কিলোমিটার এলাকায় টেকসই রিং বেড়িবাঁধ নির্মান করলে এ অসহনীয় দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে বানভাসী মানুষ। রাবনাবাদ নদীর তীব্র ভাঙনের কবল থেকে করমজাতলায় বেড়িবাঁধ সংস্কারের ছয় মাসেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনরোধে দেড় কোটি টাকা ব্যয় করে নেওয়া পদক্ষেপ ভেস্তে যেতে বসেছে। প্রায় চারশ’ ফুট মূল বাঁধসহ রিভার সাইট নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। জিওব্যাগ ও টিউব ধসে গেছে।

জলোচ্ছাসে ডেউয়ের তান্ডবে গোটা এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারা আছেন চরম ঝুঁকিতে। পাউবোর স্থানীয় কর্মকর্তার ভাষ্য মতে , বিভিন্ন স্পটে বাঁধের প্রটেকশন দেওয়া হলেও টিকছে না।

আর বিকল্প বাঁধ করার মতো কোন জমি কিংবা মাটি নেই। দেবপুরের গোটা এলাকা ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দেড় কিলোমিটার বাঁধের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। গৈয়াতলার প্রায় দেড়শত মিটার বেড়িবাঁধ প্রটেকশন দেওয়া হলেও ফের রিভার সাইট ধসে গেছে। একটি স্লুইজসহ গোটা বাঁধ ফের সোনাতলা নদীতে বিলীন হতে চলছে। এলাকার মানুষ কৃষি জমির ফসলহানির শঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

চরবালিয়াতলীর বেড়িবাঁধটি রক্ষায় জিও ব্যাগ দেওয়া হলেও তা ভেসে গেছে ৭৫ শতাংশ। এখন প্রায় আড়াই শত ফুট বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সেখানকার মানুষ চরম শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। নিজামপুরে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে অন্তত পাঁচশত মিটার বেড়িবাঁধ। স্থানীয় কৃষকরা জানান, এ বছর গত এক মাস ধরে প্রবল বৃষ্টিপাত চলছে।

চলছে নিম্নচাপের প্রভাব। অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড় বাড়ছে। ভাঙছে নদী তীর। দূর্যোগ ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। নদের বাঁধের সংস্কার না হওয়ায় চলতি আমন মৌসুমে হাজার হাজার কৃষক আমন ফসল ঘরে তোলার বিষয়টি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। কারণ বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে ধান খেত প্লাবিত হবে।

ফলে খেতে বেশি দিন পানি থাকলে আমন ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এ কারণে ফলনে বিপর্যয় ঘটবে। ফসল রক্ষার জন্য তাঁরা উপজেলা প্রশাসনের কাছে দ্রুত বাঁধটি মেরামত করার দাবি জানিয়েছেন। বালিয়াতলী ইউনিয়নের চরবালীয়াতলী গ্রামের মো, জনি মিয়াজী জানান, জলোচ্ছাসে জিও টিউব, জিওব্যাগসহ বাঁধের টপসহ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঢেউয়ের ঝাপটায় সব শেষ, এখন বাঁধের মধ্যে পানি ঢুকছে।

সবাই আতঙ্কে আছেন। বাঁধের যতটুকু আছে, তাও আবার জলোচ্ছাসে হানা দিলে সব ভেসে যাবে। ফলে তাঁদের বসতিও টিকবে না। বাঁধের পাশের বাসিন্দারা আরো জানান, বছরের পর বছর রাবনাবাদ নদী থেকে অসংখ্য ড্রেজারের বালু কাটায় এখানটায় ভাঙনে প্রধান কারন।

নদীর কুল ঘেঁষে মূল বাঁধের প্রায় ৯০ শতাংশ নদীগর্বে হারিয়ে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে গেলে গ্রাম প্লাবিত হবে-এমন শঙ্কায় যেন প্রতিটি পরিবারের বুক চেপে বসে আছে।

মানুষ এখন রাতেও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছেন না। হাজারো মানুষের বসতবাড়ি, কৃষি জমি ও গবাদিপয় পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা হাবিব বিশ্বাস, জামান হোসেন বলেন, রাতে ঘুম আসে না। প্রতি দিন ভয় নিয়ে থাকতে হয়। শুধু বাড়িই নয় গবাদি পশু ঝুঁকিতে আছে। সন্তানদের স্কুলে যাওয়া-আসা অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। বাঁধ রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলা হলেও সেগুলোর অধিকাংশই ভেসে গেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, উপকূলীয় এলাকার সুরক্ষায় শুধু অস্থায়ী মেরামত নয়, প্রয়োজন বৈজ্ঞানিক ভিত্তিক পরিকল্পনা। টেকসই ও আধুনিক বাঁধ নির্মাণ, ম্যানগ্রোভকনয়ন, নদীশাসন এবং স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল গ্রহণ করা জরুরি।

এখানে টেকসই বাঁধ নির্মাণ না করলে গ্রামবাসীর আভিতুই হুমকির মুখে পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্বল অবকাঠামো কিভাবে উপকূলকে বিপদে ফেলছে।

আধুনিক গবেষণা, বিজ্ঞান ভিত্তিক পরিকল্পনা এবং টেকসই উন্নয়ন ছাড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। স্থানীয় মানুষের কষ্ট লাঘব করতে সরকার ও গবেষকদের সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে হবে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন কলাপাড়া ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের উপকূলীয় সমন্বয়ক মো, মেজবাহ উদ্দিন মান্নু বলেন, বেরিবাঁধ ক’টি গ্রামের সমস্যা নয়, এটি পুরো উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত।

টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ছাড়া এখানে মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষা করা সম্ভব নয়। স্থানীয়দের ভোগান্তি কমাতে জরুরি ভিত্তিতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহআলম জানান, এমনিতেই প্রাকৃতিকভাবে নদীর পশ্চিম তীরের বরাবর ভাঙন প্রবণতা বেশি থাকে। একারণে রাবনাবাদ পাড়ের বাঁধ ঝুঁকিতে থাকছে।

তারপরও করমজাতলায় ইতিপূর্বে জরুরি মেরামত করা হয়েছে কিন্তু টিকছে না। ওখানে আর বাঁধ করার উপযোগিতা নেই।

মাটি নেই, জমিও নেই। দেবপুরের বাঁধ মেরামত করার পরিকল্পনা রয়েছে। চরবালিয়াতলীতে জিওব্যাগ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। সরেজমিনে পরিদর্শণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মোয়াজ্জেম হোসেন

কলাপাড়া

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © crimeseen24.com-2024
Design By MrHostBD